নুরুল কবির ,বান্দরবান থেকে ॥

বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে চলছে জুমের পাকা ধান কাটার উৎসব। জেলার ৭টি উপজেলায় বিশেষ করে দুর্গম পহাাড়গুলোতে চলতি মৌসুমে রোপিত জুমের পাহাড়ে পাহাড়ে পেকেছে ধান,খাবার উপযোগী হয়ে পড়েছে মারফাসহ হরেক রকম কৃষিপণ্য।এসব কৃষিপণ্য জুমক্ষেত থেকে আহরণ করে ক্ষেত-খামার এবং ঘরে তুলতে শুরু করেছেন জুমচাষীরা। এবারে জেলার প্রায় ৮ হাজার ৯শত ৮৮ একর জুম (পাহাড়ে চাষাবাদ) জুমচাষীরা আবাদ করে।ইতিমধ্যে চাষীরা জুম থেকে পাকা ধানসহ রকমারি ফসল কাটতে শুরু করেছে।জেলা শহর থেকে ওয়াইজংশন এবং চিম্বুক এলাকার পাহাড়ে পাহাড়ে দেখা গেছে পাকাধান কাটতে নারী-পুরুষ জুমচাষীদের। চারদিকে যেন জুম কাটার ধুম। একই সঙ্গে ধুম পড়েছে মারফা,বেগুন,মরিচ,ঢেঁড়স,কাকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন জুমের ফসল তোলার কাজও। আর এ বছর পাহাড়ে জুমের মোটামুটি ভালো ফলন হওয়ায় উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে জুমিয়া পরিবারগুলোর মাঝে।

এদিকে জুমিয়া পরিবার গুলোর মতে,পাহাড়ে বন জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে একসাথে বহু ফসল চাষকেই বলে জুম চাষ। এটি এই অঞ্চলের পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রথা। সারা বছরে তাদের খাদ্য সংস্থান এই জুম চাষের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি পরিবারগুলো ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যে বছর জুমের ভালো ফলন হয় না তখন অনেকেরই খাদ্য সংকটে ভুগতে হয়।আর জুম চাষ হচ্ছে ঢালু পাহাড়গুলোতে বিশেষ ধরনের চাষাবাদ।

থানছি চিম্বুক এলাকার জুমচাষী ¤্রাে কৃষক চিংরাই ¤্রাে এবং খামলিং ¤্রাে ও পারছি জানান,এবারে জুমক্ষেতে ফলন ভাল হয়েছে,কারণ চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভাল এবং উৎপাদন পরিবেশ ভালই ছিল।ধানের পাশাপাশি ছোটমরিচ,মারফা,মিষ্টি কুমরা,কুমড়া,তিল ও আদার ফলনও ভাল হয়েছে।তবে তিল ও আদা সংগ্রহ করা যাবে আরও কয়েক মাস পর।জেলার সদর,লামা,রুমা,থানচি,রোয়াংছড়ি,আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় পাহাড়গুলোতে একইভাবে জুমচাষ হয়েছে।এসব জুমেও ভাল ফলন হয়েছে ধানসহ রকমারী কৃষিপণ্যের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তথ্য মতে,পাহাড়ী বেশীর ভাগ মানুষ জুম চাষ নির্ভর।পাহাড়ী জমিতে ফলন কম হলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়।ঐসব অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হলে জুমের ফলন ভালো হবে এবং চাষীরা লাভবান হবে।তবে প্রতিবছর জুম চাষ করা হলে তাদের আর্থ সামজিক উন্নয়নসহ আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে এবং সারা বছরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো.আলতাফ হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৮ হাজার ৯শত ৮৮ একর পাহাড়ী জমিতে জুমচাষ হয়েছে।তার মতে, প্রযুক্তিটি দ্রুত সম্প্রসারণ করা যায়,তাহলে এলাকার মানুষের খাদ্য’র চাহিদা পুরুনে জুমুরে ভুমিকা রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদেরকে সব ধরনে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।#